হোমিওপ্যাথিক কেসস্টাডি
ব্রিবতকর একজিমা থেকে হোমিওপ্যাথিক আরোগ্য
মূল-ডা. জিরি শেওভস্কি
ভাষান্তর-গাজী সাইফুল ইসলাম
১৯৯০
সালে একটি ম্যাগাজিন হোমিওপ্যাথির ওপর আমার একটি আর্টিক্যাল ছাপে। আমাদের চেকোশ্লাভাকিয়ার মানুষ তখনো এ চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে
অজ্ঞ ছিল। পত্রিকাটির সম্পাদক প্রথমে আমাকে
তার দু’বছরের কন্যার একজিমা (কাউর) ভাল করার দায়িত্ব
দিলেন। প্রচলিত কোনো চিকিৎসা তাকে সুস্থ
করতে পারেনি। তারা এ নিয় খুব দুশ্চিন্তায়
ছিলেন। কিন্তু আমি তাকে খুব সহজে সুস্থ
করে তুলি। এরপর রোগটির পুনরাক্রমণ না হওয়ায়
সম্পাদকের মনে নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থাটি সম্পর্কে বেশ আস্থার সৃষ্টি হয়।
এবার
তিনি তার এক আত্মীয় শিশুচিকিৎসকের পাঁচ বছরের মেয়ে এলেনকার চিকিৎসার ভার আমার ওপর
দিলেন। দক্ষিণের ছোট্ট শহর বোহেমিয়ায়
তারা থাকে। ওই মেয়েটিও তার এক বছর বয়স থেকে
কঠিন এক ধরনের একজিমায় ভোগছিল।
পিতামাতা যতক্ষণ কথা বললেন মেয়েটি
চুপ করে রইল। তারা জানালেন, তারা তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য সম্ভব
সবধরনের চিকিৎসা দিয়েছেন। কিন্তু
প্রচলিত চিকিৎসা তাকে সুস্থ করে তুলতে পারেনি। তারা জানালেন, রোগটি শুধু মেয়েটিকে নয়-আমাদেরও
নিঃশেষ করে দিয়েছে। তারা বললেন, প্রথমে তার উরুতে কিছু ফসকুরি
জন্মেছিল। এরপর ওই ফুসকুরিগুলো ছড়াতে শুরু
করে। বিশেষ করে তার মাংসপেশীর ভাঁজে
ভাঁজে। গোসলের পর শুরু হয় চুলকানি। যখন সে চুলকাতে শুরু করে রেশগুলো ত্বকের ওপর ফোঁড়ার আকার নেয়। রাতে সকল উপসর্গের অবনতি ঘটে। শরীর অতিরিক্ত আঁচড়ানো পর সে কাঁদতে থাকে। অবস্থার আরও অবনতি ঘটে পরদিন দুপুরের ঘুমের সময়, তখন সে গরমের কারণে সকল কাপড়
ছুঁড়ে ফেলে। গ্রীষ্মকালে, সূর্যের
তাপে, ঘরের
গরমে, K¤^‡ji নিচে
তার অবস্থা খারাপতর হয়। আর শারীরিক লক্ষণ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রচণ্ডতা বেড়ে যায়, বিশেষ করে, যখন সে রেগে যায়, কিছু চেয়ে না পায়। (রাগ, দুঃখ, শোক বা
ক্রন্দনের সময়-রোগ লক্ষণ বাড়ে-ইগ্নে.)। এ ছাড়াও তার ঠাণ্ডা লেগেই থাকে। প্রায়শই কফ ঝরে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলায় এখন তা হাঁপানির রূপ নিয়েছে।
মেয়েটির পিতা এটা জানতেন যে, শিশুদের ক্ষেত্রে একজিমা অনেক সময় হাঁপানির
কারণ হয়। কখনো তা পূর্ণ ব্রোঙ্কাল হাঁপানিতেও রূপ নয়। এটা ছিল তাদের দুশ্চিন্তার অন্য আরেকটি কারণ। এসব কারণে মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়েই তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। সর্বোপরি হাঁপানি তার মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। অনুসন্ধান থেকে আরও জানা যায়, স্কুলের সময়ে মেয়েটির আচরণ বেশ ¯^vfvweK থাকে, সামাজিকও সে। মিষ্টি খেতে পছন্দ করে মুরগি ছাড়া সব মাংসই তার অপছন্দ। সামান্য আহার করে কিন্তু মাখন তার প্রিয়। প্রচুর পানীয় পান করে কিন্তু সবই কোল্ড ড্রিঙ্কস। গরম খাবার বা পানীয় সে খেতেই চায় না। কিছুটা
লাজুক প্রকৃতির, যত বয়স হচ্ছে ভীরুতা বাড়ছে।
Jiri Cehovsky |
সালফার-২০০
হোমিওপ্যাথিক ওষুধটি পিলের সঙ্গে মিশিয়ে একটি বিশেষ নিয়মে খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হলো। শর্ত দেয়া হলো, খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে অথবা পরে
ওষুধটি খেতে। কফি, কাঁচা রসুন ও পিঁয়াজ না খাওয়াতে। এছাড়া অন্য সকল ওষুধ বন্ধ করে দিতে। এসব কঠিন নিয়ম শুনে তারা wØavwš^Z
হয়ে পড়েন কিন্তু তবু মানতে রাজি হলেন। জানান হল, একজিমা একটি ক্রনিক চর্ম রোগ। ভাল হতে
সময় লাগবে। অধৈর্য হলে চলবে না। তার wØavwš^Z
অবস্থা দেখে, মনোবৈজ্ঞানিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য বলা হলো, যদি কখনো খুব বেড়ে যায় মলমটা লাগাবেন। কিন্তু একবারের বেশি না। তারা ওষুধ নিয়ে চলে গেলেন। নিজে
আমি রোগটা ভাল করতে পারব বলে আস্থাশীল ছিলাম। কিন্তু সন্দেহমুক্ত হতে পারছিলাম না।
তিনমাস
তাদের কোনো সংবাদ পাওয়া গেল না। একদিন
মধ্যরাতে হঠাৎ ফোন এল। কিছুটা
অতিশয়োক্তির মতো শোনা গেল মেয়েটির শিশুচিকিৎসক বাবার Kɯ^i| দক্ষিণ বোহেমিয়া থেকে তিনি বলছেন:
আপনি যা যা বলেছেন, সব করেছি। তিন মাস ধরে আমরা তাকে কোনো ওষুধ দিইনি। তার বেদনা, চুলকানি অনেকাংশে চলে গেছে। এখন তার
ভাল ঘুম হয়, কিন্তু একজিমার তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। গত দু’দিন আগেও
তার খুবই কষ্টকর কাশি হয়েছে কিন্তু সত্য হলো হাঁপানির লক্ষণটা নেই। ভয়ানক সর্দিটা অবশ্য আছে, সবসময় কফ ঝরে। কফ সিরাপটা কি আবার দেব?
‘‘না, কোনো কিছু না। ঠিক দুদিন পর ফোন দেবেন।’’
কিন্তু
আবার কয়েকমাস কেটে গেল। তাদের
কোনো খবর নেই। এরপর একদিন, কোনো পূর্বজানান দেয়া ছাড়াই তারা আমার
প্ল্যাটে এসে হাজির হলেন। তারা
খুব খুশি, আনন্দোৎফুল্ল। ‘‘এলেনকার অনেক সমস্যা দূর হয়ে
গেছে। একজিমা আছে কিন্তু আগের সেই
তীব্রতা নেই। অন্যান্য জটিলতাও কম।’’ ফোন করার
দিন থেকে সর্দিটাও চলে গিয়েছিল এবং এরপর ধীরে ধীরে একজিমার লক্ষণগুলো দূর হয়ে যায়। প্রথমে মুখ থেকে পরে শরীর থেকে। সবশেষে পা থেকে। মেয়েটির
¯^v‡¯’¨i উন্নতি
হয়েছে, গত ছ’মাস আর কোনা ওষুধ (ক্যামিক্যাল) তার পেটে পড়েনি। এমন কিছু মুহূর্ত আসে-যখন মানুষ ভাবে, যা কিছু ঘটেছে তারও প্রয়োজন ছিল।
বছরখানেক
পরে তৃতীয়বারের মতো মেয়েটির বাবা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এলেনকা
তখনো সুস্থ। কিন্তু মাঝে মধ্যে একজিমা ধরনের
কিছু ফুসকুরি তার চোখের ভ্রু’র ভাঁজে দেখা দেয়। এবার
পূর্বোক্ত ওষুটির পরবর্তী উচ্চ শক্তি তাকে প্রদান করা হলো। মাত্র এক ডোজ। একটি মাত্র চিনির বড়ি।
এলেনকা
¯^v¯’¨eZx সুন্দরী
মেয়ে হিসেবে তার স্কুলের পড়াশোনা চালাতে লাগল। তার পিতার পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, এলেনকার
শরীরে এখন আর একজিমার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ওটা ছিল অন্য আর সব চিকিৎসা থেকে আলাদা জাদুকরি এক আরোগ্য। এর বেশি কিছু না। হোমিওপ্যাথিতে
এমনটি সবসময়ই ঘটে থাকে-যখন হোমিওপ্যাথির নিয়ম মেনে চিকিৎসা দেয়া হয়। একজিমার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ যেমন গ্রাফাইটিস, পেট্রোলিয়াম, সিপিয়া, টেলুরিয়াম (দাদ) লক্ষণানুযায়ী রোগীতে প্রযুক্ত
হয়ে রোগীকে আরোগ্য দান করতে পারে।
[জিরি চেহোভস্কি (Jiri
Cehovsky) বিশ্বখ্যাত ক্ল্যাসিক্যাল হোমিওপ্যাথ। জন্ম ১৯৪৭ সালে চেকোশ্লাভাকিয়ায়। ২৬ বছর
ধরে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করছেন। লিখেছেন বহু মূল্যবান প্রবন্ধ ও বই। ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন প্রাগ হোমিওপ্যাথি কাডেমির পরিচালক। ‘অটোপ্যাথি’ নামে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি বিশেষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন