কিশোরীর বুঝে না কী তার সমস্যা
বয়স ১২ কী ১৩। নাম সাথী। বাড়ি শেরপুরে। বর্তমানে থাকছে গাজীপুরের উত্তর ছায়াবীথিতে। মায়ের সঙ্গে এসেছে আমাদের প্রতিষ্ঠান, পিয়াস হোমিও হলে-এ। প্রথম মাসিক হয়েছে মাস ছয়েক আগে। এরপর আর রক্ত বন্ধ হয়নি। চুয়ে চুয়ে ঝরছে, ভীষণ এক অস্বস্তি। কোথাও শুয়ে বসে শানি নেই। শেরপুরে থাকতেই সমস্যা প্রথম দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় এলোপ্যাথি ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে ডাক্তার প্রথমবার চিকিৎসা দেন। কাজ হয়নি। দ্বিতীয়বারও একই ডাক্তার চিকিৎসা দেন। কাজ হয়নি। পরীক্ষা করানোর কথা বললেন। কিন্তু এত টাকা নেই, মেয়েও রাজি নয়। মেয়ের এমনিতে কোনো সমস্যা নেই। হ্যাংলা পাতলা গড়নের বাড়ন্ত শরীর, চটপটে, হাসিখুশি। মাঝেমধ্যে মনমরা থাকে অসুখটার জন্য। বাপ-মায়েরও চিন্তার শেষ নেই। এত অল্প বয়সে মেয়ের এ কী ধরনের সমস্যা?
হোমিওপ্যাথির প্রতি আস্থা নেই। গাজীপুরে এসে আবারও একজন এলোপ্যাথি ডাক্তার দেখান। কিন্তু কাজ হয়নি। খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েন মেয়েকে নিয়ে। ঠাকা-পয়সাও নেই। কোথায় যাবেন? অবস্থা বেগতিক। এমন সময় প্রতিবেশী এক মহিলার কাছে শুনেন পিয়াস হোমিও হলের কথা। এরপর সেই মহিলাকে নিয়েই আসেন আমাদের প্রতিষ্ঠানে।
বললেন, ডাক্তার সাহেব চিন্তায় কিছু ভাল্লাগে না। গরীর মানুষ। আট-নয়শো টাকা খরচ অইয়া গেছে। আপনি যদি একটা ভাল ওষুধ দেন।
আমি সব কথা শুনলাম। এ ধরনের রোগীর অভিজ্ঞতা থাকায় নির্দ্বিধায় মাত্র একটি ওষুধ ১০ দিনের জন্য দিয়ে বললাম, ১৫ দিন পর পরবর্তী মাসিক বন্ধ হলে দেখা করবেন। টাকা নেই, সঙ্গে আছে মাত্র ২০ টাকা। যাহোক, নির্ধারিত নময়ে তারা এলো।
ফলাফল বেশ ভাল। পরবর্তী মাসিক হয়েছে, তিনচার দিন রক্ত গেছে বেশি। কিন্তু এখন মাঝেমধ্যে একটু আধটু দেখা দেয়। বেশিরভাগে সময় থাকে না।
আরেকটি ওষুধ দিয়ে বললাম, সম্ভবত আর ওষুধ লাগবে না। পরবর্তী মাসিকের ৮/১০দিন পর এসে জানিয়ে যাবেন।
১৫/২০ দিন পর মা-মেয়ে এলো দেখা করতে। তারা খুব খুশি। মেয়ের সমস্যা দূর হয়ে গেছে।
এটা খুবই সাধারণ একটা মেয়েলি সমস্যা। কম বয়সী মেয়েদের পর্যাপ্ত পুষ্ঠির অভাবে, রক্তের অভাবে, জরায়ুর পূর্ণতা বা অন্য কোনো ত্রুটির কারণে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ , নির্বাচন সঠিক হলে ম্যাজিকের মতো রোগীকে সুস্থতা দান করে। যাহোক, কম বয়সী মেয়েদের এসব কেসে ওষুধ লাগে বেল, পালস, সেকেলি, সেবাইনা, ক্ষেত্রবিশেষ নেট মিউর, বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে লবেগ উপর্যুক্ত ওষুধ ছাড়াও হ্যামা, জান্থজাইলাম, থ্যালাস্পি বার্সা ইত্যাদি।
ডা. গজী সাইফুল ইসলাম
লেখক, অনুবাদক ও হোমিও গবেষক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন