হোমিওপ্যাথির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য
গাজী সাইফুল ইসলাম
Hippocrates Hippocrates |
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস বহু প্রাচীন। যুগে যুগে অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষ তার চিকিৎসার প্রয়োজনে বিভিন্ন প্যাথি যেমন কবিরাজী, আয়ুর্বেদিক, হেকিমি, ইউনানি, ঝাড়ফুঁক, জ্বিন-ভূত-ডাকিনি বিদ্যা, অ্যালোপ্যাথি, হ্যোমিওপ্যাথি ইত্যাদির জন্ম দিয়েছে।
প্রাচীনযুগ: খ্রিস্টের জন্মের বহু আগেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের উদ্ভব হলেও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় গ্রিকদেশীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানি হিপোক্রেটিসের সময় থেকে। তিনিই প্রথম তাঁর এবং তাঁর সময়ের আগের গ্রিক চিকিৎসা সম্পর্কে গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি উভয় মতেই রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন। তিনিই প্রথম ঘোষণ করেন যে, রোগ দেব-দেবী আশীর্বাদ-অভিশাপ, বা পাপ-পূণ্য ইত্যাদি ফলোশ্রুতি নয়, রোগ হলো প্রাকৃতিক কারণ। তাঁর সময়ের চিকিৎসকদের প্রবল বিরোধীতা সত্ত্বেও তিনি তাঁর ধারণায় অবিচল থাকেন এবং চিন্তা ও চিকিৎসাপদ্ধতিগুলো The Hippocratic
Corpus
নামক পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেন। তিনিই প্রথম চিকিৎসকদের শপথনাম (Hippocratic
Oath) রচনা করে, যা পাঠের মধ্যদিয়ে আজও নতুন চিকিৎসকগণ তাদের চিকিৎসা জীবন শুরু করেন। এ জন্য তাঁকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। ওই সময় প্রাচীন মিসরেও চিকিৎসা বিদ্যার উৎকর্ষ সৃষ্টি হয়েছিল। হিপোক্রেটিস নিজেই মিসরীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা স্বচোখে দেখার জন্য মিসর ভ্রমণ করেছিলেন। তৎকালের মিসরের যে সব মহান চিকিৎসক তাঁদের চিকিৎসাকর্মে বহুমুখী ও বহুবিস্তৃত সফলতা অর্জন করেছিলেন হেরোডোটাসের লেখা "The
healthiest of all men, next to the Libyans
"
বইয়ে তাদের নাম পাওয়া যায়ু। প্রথমদিকের এমনই একজন দন্ত চিকিৎসকের নাম Hesy-Ra, যিনি খ্রিষ্টপূর্ব ২৭ শতকে রাজা Djoser পারিবারিক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আরেকজনের নাম Peseshet, যাঁকে আমরা পৃথিবী প্রথম ‘‘নারী রোগ চিকিৎসক’’ চিহ্নিত করতে পারি। মিসরীয় ৪র্থ ডাইনেস্টির এই চিকিৎসকের চিন্তার শিরোনাম "Lady
Overseer of the Lady Physicians." ছাড়া ব্যাবিলন (বর্তমান ইরাক), চীন ও ভারত ওই সময় চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতা দেখিয়েছে এবং আধুনিকতার সূচনা করেছে। ভারতে হারবাল চিকিৎসার সূচনাও হয়েছিল সেই সময়েই। ‘দ্য আথার্ভাভেদ’ বা ‘অর্থ ভেদ’ ভারতের প্রথম ওষুধ বা চিকিৎসা বিষয়ক বই, ‘ঋকভেদ’এর ত্রৈবিদ্যা থেকে সংকলিত হয়েছে। ‘অর্থ ভেদ’ থেকেই হারবাল বা আয়ুর্বেদ (Ayurveda) চিকিৎসার বেশিটা এসেছে। আয়ুর্বেদ শব্দের অর্থ: Ccomplete
knowledge for long life. ভারত বরারবরই চিকিৎসা বিদ্যার উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা রেখে এসেছে। ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে মুসলমান শাসকগণ ভারতের হায়দারাবাদে প্রথম এবং ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীতে দ্বিতীয় আধুনিক হাসপাতাল গড়ে তুলেন।
মধ্যযুগ: মধ্যযুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উল্লেখ করার মত তেমন কোনো উন্নতি না হলেও ১৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে ডা. স্যামুয়েল হ্যানিম্যান কর্তৃক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রবর্তন ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বলা হয়ে থাকে যে, ইউরোপে হোমিওপ্যাথির জন্ম হয়েছে, আমেরিকা তাকে লালন করেছে আর ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। ১৮০০ শতকের শেষের দিকে নৃপতিশাসিত মধ্যপ্রাচ্যের কোথাও কোথাও, বিশেষ করে, তুরষ্ক ও পারস্যে ইসলামিক ওষুধ ও চিকিৎসা চালু হয়েছিল।
আধুনিক যুগ: ১৯ শতাব্দিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটে যায়। ইনফেকশনের কারণ হিসেবে আবিষ্কৃত হয় জার্মতত্ত্ব (The germ
theory of disease)। আর বিশ শতাব্দিতে প্রবর্তিত হলো বায়োলজিক্যাল চিকিৎসা, আবিষ্কার হলো অ্যান্টিবায়োটিক। এরই সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত হলো রসায়ন, জেনেটিকস ও প্রযুক্তি বিদ্যা (chemistry,
genetics, and lab technology) এক্স-রে। ২১ শতক যাত্রা করল অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজড ওষুধ ও প্রযুক্তবিদ্যা নিয়ে। তাই বলা যায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান সফলতা যেমন অ্যালোপ্যাথির টেস্টটিউব বেবি, জমজ জোড়া লাগান সন্তার পৃথককরণ, হরমোনের বারসাম্যহীনতায় সৃষ্ট রোগীকে নারী থেকে পরুষ আর পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরকরণ, ক্যান্সারের ক্যামোথেরাপি আর হোমিওপ্যাথির ব্রেন টিউমার, ক্যান্সার চিকিৎসা সফলতা ইত্যাদি কল্পনাকেও হার মানিয়ে দেয়।
গাজী সাইফুল ইসলাম
gazisaiful@gmail.com
homeolifebd.blogspot.com
gazisaifulkotha.blogspot.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন