Poems by Gazi Saiful Islam
কেবল তোমাকে ভালোবাসি
কেবল তোমাকে ভালোবাসি
নির্ভয়ে নির্ভরতা পাশে আবদ্ধ রয়েছি তাই।
আমার ভালোবাসার নিঃশঙ্ক আলো
অন্ধকারে তোমায় ফলো কর হররোজ।
আমার ভালোবাসার শান-শওকত
বিত্ত বৈভব, ঐশিক বিস্তৃতি
এত ব্যাপক যে, বৈশ্বিক কিছুতে
রাখতে পারি না তাকে।
তুমি তো মহা আয়তাকার
তুমি তো মহা বিস্ময়, সকল আলোর উৎসমুখ
ঔজ্জ্বল্যের তীক্ষ্ণতায় অশেষ
জুড়ি মেলে শুধু তোমার সঙ্গে
তোমার অন্তহীন অসীম বিস্তৃতির সঙ্গে
কূলহীন কূলের সঙ্গে
অতলান্ত তলের সঙ্গে।
কিন্তু দেখো, কত ক্ষেপাটে ভাবনা আমার
খেয়ালে কিংবা খেয়ালহীনতায়
ঘুমন্ত কিংবা জাগরণে হরহামেশা
নিজেকে আমি তোমার ভালোবাসার যোগ্য করে তুলেছি,
নিরন্তর নির্ভরতার প্রতীক তুমি
আমি তোমাতেই কেবল ঠাঁই পেতে পারি।
আসলে তোমাকে সজ্ঞায়িত করা
তোমার পক্ষেই কেবল সম্ভব।
তোমার বর্ণনা কেবল তুমিই
যেমনটি ইচ্ছে করতে পারো।
যেমন করেছ সুরা আল এখলাসে:
বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
তিনি কাউকে জন্ম দেননি
এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
কী সাধ্য আমার নিজে থেকে ডেকে না নিলে
তোমার নিকটে পৌঁছুই।
কী সাধ্য আমার, অনুমতি না দিলে
ভালোবাসতে পারি-অধম জোনাকি সমান
যদি পুড়ে ছাই হয়ে যাই অকস্মাৎ?
মেঘনার জন্য
(সেলিম সাইফুলকে)
সামনে মেঘলা তিথির বন্দর
স্বাগতম, হাঁটো দৃঢ় শান্ত পায়ে
পেছনে আসছি আমরা ক'জন
সোনা খচিত ময়ূরপঙ্খী নায়ে।
যাও, গিয়ে স্থিত হও তার ধ্যানে
প্রেম যমুনা তীরের ওই ঘাসে
ঠিক যেখানে ঘুমিয়ে মমতাজ
জগৎ নন্দিনি, তার বুকপাশে।
মেঘ পসরায় সাজিয়ে বাসর
মন বৃন্দাবন মাতছে পবনে
আশার জোনাকি রাতের খেয়ায়
হাসছে কেমন কদমকেয়ার বনে।
গাসাই
১৮/০৬/২২
গান
সবাইকে সব কথা বলতে নেই
জানাতে নেই সমবেদনা
তাতে দুঃখ বাড়ে কাতরতা বাড়ে
সবার প্রাণ দুঃখ সহে না।।
পড়ন্ত বেলার এক গাঙচিল
কষ্ট নিয়ে যাচ্ছি ফিরে
কুড়িয়ে নিচ্ছি ঝিনুক পাথর
তুমি দেখছ দাঁড়িয়ে তীরে।
পরিচয় মুছে গেছে লোনাপানিতে
বুকে গুমরে মরে বিরহের কান্না।।
যেসব গান হয়েছে সমাপ্ত
ধলাইয়ের তীরে
সে সবের গুনগুনানি এখনও চলে
শ্রান্ত পাখিদের ভিড়ে।
কষ্ট নিও না স্পষ্ট কথায়
তোমায় খোঁজা আমার কাজ না।।
গাসাই
শুক্রবার: চিন্তাস্রোত
যিনি জানেন বাতাসের বয়নকৌশল
(1)
নিৎশের কথায় একদমই কান দিও না।
তার পুরো বকবকানি জুড়ে রয়েছে-স্ববিরোধীতা।
পয়গম্বর হওয়ার খায়েস ছিল তার
নাস্তিকদের পয়গম্বর। কিন্তু বিশ্বাসীর
প্রবল, শানিত শক্তির নিকট
হার মানতেই হলো তাকে।
জরথুস্ত্র বললেন: ঈশ্বর মৃত
কিন্তু কোনো প্রমাণ দিলেন না।
তিনি কি ঈশার মৃত্যুকে(সা.) মিন করেছিলেন?
জরথুস্ত্রীয় এ ধারণা বিশ্ববাজারে বিকোলো প্রচুর
কিন্তু মন থেকে কেউ গ্রহণ করল না।
জ্ঞানী লোকেরা হাঁটলো
তাদের বিশ্বাস বরাবর দিকচক্রবালের দিকে
দেখলো অবিশ্বাসের পথ অশেষ, অর্থহীন।
এরপর তারা ঘুরে দাঁড়ালো মহাসমুদ্রের দিকে
চিনতে চাইলো ভাসমান ফেনাকে
বাতাসের ছন্নছাড়া মেঘকে
পরক্ষণেই দেখলো, সে সব হারিয়ে গেছে
নোঙ্গর-বন্দরহীন অসীম শূন্যতায়।
ইতোমধ্যেই বিজ্ঞান জানালো:
"নিরঙ্কুশ শূন্যতা বলে কিছু নেই।"
তারা সেই জ্ঞান গ্রহণ করলো, বুঝলো
আকাশের যিনি ধারক,
যিনি জানেন বাতাসের বয়নকৌশল
তারই সামনে নতজানু হওয়ার বিকল্প নেই।
তারা দৃঢ়তর শপথে ঐক্যবদ্ধ হলো।
আল কোরানও পূর্বেই জানিয়েছিল:
তোমাদের প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন
আর আমার কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
বালিয়ার মোড়
১৭-০৬-২২
একলা
জীবনের দৌড়ে সকলেই একা সেই জন্ম থেকে...
কিছুদিন থাকে সোহাগ আদরে
এরপর সবকিছুতেই ভাটা
শুরু হয় হারজিতের একলা দৌড়
সবাই জন্মে না সোনার চামচ মুখে নিয়ে
কারো যৌবনের দিনগুলো বড় রূঢ় হয়
আসমানে থাকে কপালপোড়া রোদ্দুর
নদীতে কুমির, ডাঙ্গায় শোষক সুশীল
যুদ্ধ থামে না একলা জীবনে।
জীবনের দৌড়ে সকলেই একা, প্রকৃতই একা মাঝখানে জুটে কিছু সঙ্গী সাথী।
কত রকমের শিকল মানব পায়ে
জ্ঞানের-প্রেমের, সাহিত্য-দর্শনের, মায়া-মাতৃত্বের, বন্ধু-বন্ধুত্বের
অতসব শিকল এগোতে দেয় না কাউকে
অথচ দিনের শেষে সবাই পৌঁছতে চায় গন্তব্যে।
গাজী সাইফুল ইসলাম
বালিয়ার মোড়, ফুলপুর
ময়মনসিংহ।
+৮৮০১৬২৮৩২৪২৩৫।
রওশন
একজন নারী, না-না একজন মানবী।
একটা শুভ্রতা। সবকিছুর ওপর তার আলো
সেই আলো দূর থেকেও আমি দেখতে পাই।
পান-সুপারির রসে রাঙা
নিদাগ হাসিটা তার এখনও আমার ভেতরে
জ্বলমলে। আটাশ বছর আগে তরুণ আবেগে
আমি কি ভুল দেখেছিলাম?
এখন এই চট্টগ্রাম বিস্ফোরণের পর
তার ভেতরের বিস্ফোরণটাও আমি দেখতে পাচ্ছি।
কতটা দগ্ধিভূত ও বিপর্যস্ত।
এ কালে, নাকি সর্বকালেই মানুষের প্রাপ্তি, শূন্য।
জানি, হঠাৎই শেকড়-বাকলহীন হয়ে যেতে পারে যে কেউ
বিশ্ব জুড়ে দেশে দেশে বাস্তুহারারা এ সত্য জানে
ফিলিস্তিনিরা জেনেছে এক শতাব্দী আগে
রোহিঙ্গা ও ইউক্রেনিরা জেনেছে সম্প্রতি।
রওশন এসবের কিচ্ছু জানতো না
রাজনীতির কূটনীতি বাজারদরের ওঠানামা
এসব জানার তার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
ছোট্ট সংসার সবকিছু ছিল
গাছের শীতল ছায়া, আলো-বাতাসের ঝলকানি
নদীর কল্লোল, তার প্রয়োজন ছিল না সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে
কিন্তু একেবার অকস্মাৎ কল্পনার বাইরে
শক্তি নিয়ে নিজেরই রান্নাঘর
হাঁড়ি-পাতিলগুলো বিদ্রোহ করে বসলো
পুঁটি-দারকিনাগুলো অকল্পনীয় ধাক্কায় ভেঙে ফেললো পুরনো চুল্লিটা তার।
চল্লিশ বছরের অভ্যস্ত জীবনে রওশন দেখল
চট্টগ্রামের আগুন তার ঘরে
তিনি ছিটকে পড়লেন-সংসার থেকে
জীবনের মায়া নয়
সংসারের মায়ায়, বুকের ভেতরে যে ধড়ফড়ানি
তাকে দমাতে চেষ্টা আপ্রাণ
রওশন জানে, অন্ধকারে পথ হারানো
তাকে মানাবে না, তাকে হাঁটতে হবে
সামনে আরও অনেক পথ রয়েছে বাকি .....
গাসাই
০৮/০৬/২২
বালিয়ার মোড়
১৭-০৬-২২