হোমিওপ্যাথিক সাইলেসিয়া ওষুধটি
কীভাবে গলার কাটা দূর করে?
ডা. গাজী সাইফুল ইসলাম
হোমিওপ্যাথিক সিলিকা ওষুধটি কীভাবে গলার কাটা দূর করে?
ফেবুতে আমাদের বন্ধু ফায়েক এনাম প্রশ্নটি তুলেছে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
এমন বিষয়ের আলোচনা-পর্যালোচনা হওয়া জরুরি। এতে নতুনদের জানার পরিধি যেমন বাড়ে
হোমিওপ্যাথি বিরোধীদেরর সব না হলে কিছু প্রশ্নর উত্তর অন্তত দেওয়া যায়। আলোচনার কারণে ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছেন চারটি ওষুধ
এ ক্ষেত্রে কাজ করে। সাইলেসিয়া(সাইলিশিয়া),
হাইপেরিকাম, অ্যানাগেলিস প্রধান। সাইলেসিয়ার অবর্তমানে (লক্ষণ মিললে)
হিপার সালফারও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো: এসব ওষুধ শুধু কীভাবে গলার কাটা দূর করে?
উত্তর: না, শরীর যন্ত্রের যেকোনো স্থানের কাটা দূর/বের করে। যাহোক আমাদের আলোচ্য প্রশ্ন
হলো: সাইলেসিয়া বা সিলিকা (Silica/Silesia/Silicea) ওষুধটি কীভাবে গলার কাটা দূর করে?
Fayek Enam নিজেই একটি উত্তর দিয়েছেন: ’’সাইলিশিয়ার পূঁজ তৈরি করার ক্ষমতা আছে। গলায় কাটা বিঁধে থাকলে সাইলিশিয়া প্রয়োগ করলে কাঁটা
বিদ্ধ স্থানে পূঁজ তৈরি হয়। ফলে কাঁটা গেঁথে থাকা স্থানটি লুজ হয়ে কাঁটা
ঐ স্থান থেকে বের হয়ে যায়।
হিপার সালফারেরও পূঁজ তৈরি করার ক্ষমতা আছে। ফলে গলায় কাঁটা বিধলে হিপার
প্রয়োগ করলে কাঁটা বিদ্ধ স্থানে পূঁজ তৈরি হয়। ফলে
কাঁটা বিদ্ধ স্থান থেকে নড়বড়ে হয়ে ছুটে যায়।’’
ডা. এনামের উত্তরটি নিয়ে অনেকেই যেমন আপত্তি তুলেছেন অনেকেই আবার উত্তরও
দিয়েছেন। যেমন DrRumi Akram একটি সুন্দর উত্তর দিয়েছেন: ‘‘এগুলো পেশীতে বা কোষের মধ্যে রিফ্ল্যাক্স গতি ( বা
বহির্মমুখী গতি) তৈরি করে
এবং ফরেন বড়ি ঠেলে বের কর দেয়।”
এখানে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে যে,
কাটা সরানোর জন্য সিলিকা গলায়
পূঁজ তৈরি করে কি-না। না হলে সিলিকা কাজটি করে কীভাবে?
এখানে
প্রথমেই জানিয়ে রাখা দরকার যে, কাঁটা সরানোর জন্য সিলিকা সবসময়
রোগীর গলায় পূঁজ তৈরি করে না। করার প্রয়োজনও হয় না। তার হিলিং
পাওয়ার দু’ধরনের। পূঁজ তৈরি করে আরোগ্য এবং পূঁজ তৈরি না করে আরোগ্য। ক্ষেত্র বিশেষ
পূঁজ তৈরি করাটা রোগীর জন্য ভয়াবহ হতে পারে।
আরও কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, কতদিন আগের কাঁটা? তার কথা অনুযায়ী যদি পূঁজ হয়, তাহলে একদিন আগে যে কাটা ফুটেছে সেটার জন্যও হতে পারে। আবার
কোনো কোনো রোগীর কাঁটা
এত সূক্ষ্ম থাকে যে, ক্ষণে কাঁটা অনুভূত হয় ক্ষণে হয় না। এমন ক্ষেত্রে রোগী নিশ্চিন্ত থাকে না কাঁটা লেগেছে
কি-না। তখন কী হবে?
আমি আমার রোগীদের
প্রায়শই একটা কথা বলি: এ ওষুধগুলো যেমন (হিপার,
সিলিকা...) অত্যন্ত লজিক্যাল। প্রয়োজন বোঝে কাজ করে। ডাক্তারের প্রয়োগে বড় ধরনের ভুল না হলে ওষুধ রোগীর জন্য যুক্তিশীল কাজটিই করে। যেখানে পুজ উৎপত্তির অবস্থা তৈরি
হয়েছে(অর্থাৎ ইনফেকশ আছে) সেখানে বেশি
করে পূঁজ তৈরি করে, আর যেখানে পূঁজের প্রয়োজন নেই, সেখানে এমনিতেই সুস্থ
করে দেয়। Uttam
Dawnযেমন বলেছেন: ‘‘আমি তো বহুবার কেবল মাত্র সাইলেসিয়া প্রয়োগ করে ভালো ফল পেয়েছি। কখনো পূঁজ হতে দেখিনি।’’
কারণ কাঁটার স্থানটিতে পূজ হবার উপক্রম হয়নি। কাটা থাকার কারণে সামান্য গুটলির
সৃষ্টি হয়েছিল মাত্র যা সাইলেসিয়া প্রয়োগে দূর হয়ে জায়গা সমান/মসৃণ হয়ে গেছে। ফলে কাঁটা বের হয়ে গেছে। কাছাকাছি কিংবা একইরকম কিছু ঘটনা
ঘটে পিত্তথলির পাথরে চিলিড, কার্ডুস,
ক্যালকে, চায়না, সলিডাগো, কলেস্টরিনাম ইত্যাদি প্রয়োগের ফলে। কিডনির ক্ষেত্রে
বার্বেরিস ভল, কলেস্টরিনাম
ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে। কিংবা কন্সস্টিটিউশনাল অন্যান্য মেডিসিন ব্যবাহারের ফলে। এসব ছাড়াও এ প্রশ্নের আরও উত্তর আছে।
হোমিওপ্যাথির ফিলোসফিতে ফিরতে হবে। হোমিওপ্যাথি কীভাবে রোগী আরোগ্য করে?
১। (কাঁটার ক্ষেত্রে) কাঁটার
কারণে সৃষ্ট অসুস্থতা থেকে উদ্ধার করার জন্য দেহযন্ত্রে প্রযুক্ত ওষুধ রোগীর
ক্ষতিগ্রস্থ জীবনী শক্তিকে পুনরুদ্ধার করে। ফলে জীবনী শক্তিই
তার অমোঘ ক্ষমতা বলে কাটাকে সরিয়ে দেয়। আর
এমন র্যাশনাল হিলিং পাওয়ারের জন্যই হোমিওপ্যাথির এত সাফল্য।
বিরোধীরা এ বিষয়টা বুঝতে পারে না বলে হোমিওপ্যাথিই সমালোচনা করে।
হোমিওপ্যাথিকে অবৈজ্ঞানিক আখ্যা দেয়। আমি নিজে যদি জীবনের শুরুতে পর্যাপ্ত হোমিওপ্যাথিক
ফলাফল দেখতে না পেতাম নিশ্চয়ই এ পথে পা বাড়াতাম না। পা বাড়াতেন
না রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, মহাত্মা গান্ধী।
হাইপেরিকামের ত্বকের কাঁটা সরানোর প্রক্রিয়া আমি নিজে যতটুকু পরীক্ষা
করেছি। আমার হাতের আঙুলে তালু অংশে একটি বড়ই কাঁটা ফুটার পর আমি
সেটিকে ওখান থেকে বের করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বের না করে দু’ তিন ডোজ হাইপেরিকাম 200 খেলাম। আর অপেক্ষা করলাম। ঘণ্টায় খেয়াল রাখলাম পরিবর্তনগুলো।
দেখলাম ভেতরে ছোট হতে হতে কোথায় মিলিয়ে গেল। আমি সিদ্ধান্ত নেই,
কাঁটা ও ত্বকের মাঝে কিছু একটা বিস্ময়কর প্রক্রিয়া ঘটে। হয়তো এতে কাঁটা গলে ত্বকের
সঙ্গে মিশে যায়। কিংবা বেরিয়ে যায়। থুজা যেমন ওয়ার্টস দূর করে দেয়।
কাঁটার গলে যাওয়া নিয়ে বিরোধীরা বলেন: ‘‘সাইলেসিয়া ২০০ খেলে শোনা যায় গলায় ফুটে থাকা মাছের কাঁটা গলে যায়।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর ঘোষ সাইলেসিয়া ২০০
ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষণের উদ্দেশ্যে কাঁচের প্লেটে সাইলেসিয়া ২০০ নিয়ে তাতে
দিনের পর দিন মাছের একটা ছোট্ট কাঁটা ডুবিয়ে রেখে দেখেছিলেন- কাঁটা যেমনকে তেমনই রইল!’’
আজ আমি সে আলোচনায় যাব না।
আমি আলোচনাটি আর দীর্ঘয়িত না করে হোমিওপ্যাথি ওষুধে যাদের
অবিশ্বাস তাদের সঙ্গে তর্ক লিপ্ত একটি হাই থট ছেলের বক্তব্য এখানে তুলে ধরছি। আপনারা জানেন, বিরোধীরা হোমিওপ্যাথির সূক্ষ্মমাত্রা
নিয়ে বরাবরই আঙুল তুল আসছেন। আমাদের বেশিরভাগ হোমিওপ্যাথের
দুর্ভাগ্য আমরা তাদের ধারে কাছে যাই না। তাদের লেখা বা চিন্তাগুলো পড়ার যোগ্যতা
নেই বা অর্জন করার চেষ্টা করি না।
আমি Muhammad Talut এর একটি তর্কমূলক মন্তব্য এখানে হুবহু তুলে ধরছি। আর ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি না চেনা, না জানা বন্ধু Muhammad Talut এর কাছে। তার
অনুমতি ছাড়া লেখাটি এখানে হুবহু কোড করছি বলে:
আসলে
হোমিওপ্যাথি কিভাবে কাজ করে তা জানার জন্য গবেষনার যে পদ্ধতি তা ভুল! আর এটা
কিভাবে কাজ করে তা এর চিকিত্সকদের পক্ষে বোঝানো মুশকিল,
কেননা তাদের আধুনিক বিজ্ঞানে দুর খুব
কম! তবে Nano-Technology নিয়ে পড়াশুনা করে আমি বুঝতে
পারি এটা কাজ করতেও পারে, একেবারে অসম্ভব না! ধরুন Thuja
30 ওষুধের কথা ! এতে ৩০০ ভাগ alcohol এর
সাথে এক ভাগ মূল নির্যাস আছে! এটা কিন্তু একেবারে “কিছু
নাই” তা না! এক শিশি ওষুধে তাও কয়েক কোটি অনু পাওয়া
যাবে! মাত্র ২ গ্রাম hydrogen কয়েক trillion অনু থাকে! আঁচিল বা wart এর চিকিত্সায় এটা
আসলেই কার্যকর ! কিন্তু কিভাবে? সম্ভবত খুব সল্প পরিমান
ওষুধের অনু আঁচিল এর আক্রান্ত কোষগুলো চিন্হিত করে সেগুলোতে nutrition
transfer block করে ফেলে ! ফলে তা মরে শুকিয়ে ঝরে যায়! আমার
মনে হয় এভাবেই cancer এর চিকিত্সাও সম্ভব হচ্ছে ! এটা
কিন্তু nano কনসেপ্ট support করে!
আসলে এই ওষুধে সাগর এর সমান জলে নির্যাস বা মূল উপাদান মেশানো হয়না যা discovery
channel এ দেখানো হয়েছে! ওগুলো আসলে Pharmaceutical
Company গুলার অপপ্রচার।
Muhammad Talut
ডিসেম্বর
10,
2009
প্রসঙ্গত একটি রোগিনীর অভিজ্ঞতা আমি এখানে তুলে ধরব: আমার কাছে এক মহিলা রোগী এসেছিল
বহু দূরের আরেক জেলা থেকে। তার গলার তালুর পেছনে কনিষ্ঠ আঙুল
সমান মোটা হাফ ইঞ্চির মত লম্বা একটি
মাংস পিণ্ড ঝুলছিল। গরীব মানুষ। এসেই আমাকে হুমকি দিয়ে বলেছিল: ‘‘যদি পারেন, তাহলে চিকিৎসা করবেন, না হলে আমার সময় নষ্ট করবেন।’’ আমার সঙ্গে আরেকজন হোমিও ডাক্তার ছিলেন। সব দেখে, শুনে তিনি বললেন: ‘‘সাইফুল ভাই এ রোগী ছেড়ে দেন। ময়মনসিংহ চলে যাক।’’ কিন্তু আমি সাহস করলাম। বিশেষ করে বহু দূর
থেকে আসার কারণে। গরীব মানুষ এত টাকাই বা কোথায় পাবে। এসব চিন্তা আমি মনে মনে
করছিলাম।
১। রোগী কাটা লেগেছে কি না বলতে পারেন না।
২। গিলতে কষ্ট হয়। কিন্তু প্রবল (হিপারের মত) ব্যথা নেই।
৩। অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। শরীরে হালকা জ্বর থাকে।
রোগীর বাস্তবতা ও অবস্থার মূল্যায়ন:
১। লোকেরা রোগীকে ক্যান্সার হয়েছে বলে ভয় দেখিয়েছে। অনেক চিকিৎসক দেখিয়েছেন
কিন্তু চিকিৎসা দিতে সাহস পায়নি। গলার মত সেনসেটিভ জায়গায় সমস্যা বিধায় চিকিৎসার
জন্য সময় পাওয়া যাবে খবুই কম। অপারেশন করিয়ে নেওয়ার চিন্তা রোগীর মাথায় ঢুকে গেছে।
কচুর লতার মত হাফ ইঞ্চি
মোটা মাংস পিণ্ডটা দেখে কেউ হয়তো কাটার
চিন্তা করতেন না। অতীত অভিজ্ঞতার কারণে আমি ধরেই নিলাম এতে সূক্ষ কাটা আছে। কাটার চিন্তা করলে কেউ হয়তো পাকানোর চিন্তা করে সিলিকাই
দিতেন। কিন্তু গলা হওয়ায় আমি ঝুঁকি নিতে রাজি হলাম না। পুঁজ সৃষ্টি না করে শরীর
যন্ত্রের কাটা সরানোর ক্ষেত্রে সমান শক্তিশালী ওষুধ হাইপেরিকাকে আমি স্মরণ করলাম
এবং একই সঙ্গে আরেকটু দূরদর্শী হলাম।
থুজা ২০০ এর মাত্র ১ ডো খেতে দিলাম। ২০ নং হাফ ড্রাম বড়িতে মাত্র দু’তিন ফোটা হাইপেরিকাম দিলাম। ছয় ঘণ্টা পর পর খাওয়ার জন্য।
শক্ত খাবার বারণ করে দিলাম। আর গলার প্রদাহিত অবস্থা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হালকা
গরম পানিতে ব্যবহারের জন্য ক্যালেন্ডুলা মাদার দিয়ে বললাম,
দুই তিন ঘণ্টা পর পর গড়গড়া করার জন্য। সময় দিলাম তিন দিন।
সেটা ছিল সোমবার। বললাম: উপকার পেলে শক্রবার সকালে এসে দেখিয়ে যেও। না হলে যেদিকে মন চায় চলে যেও।
এরপর যথারীতি রোগিনীটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। ফলে
হোমিওপ্যাথির বিভিন্ন বই-পুস্তকে ঢু মারতে থাকলাম। তার বিষয়টি নিয়ে পৃষ্ঠার পর নোট করলাম। কিন্তু শুক্রবার
সকাল কেটে দুপুর গড়িয়ে বিকেলও পার হলো
রোগিনীর দেখা নেই। ভাবলাম শহরেই চলে গেছে।
মাগরীবের আগে আগে রোগিনীর ফোন।
-কাকা আমাকে আসতে হবে? তার মুখে হাসি।
-তুমি হাসছ যে, মানে উপকার হয়েছে?
-কাকা আমি তো প্রায় ভালো হয়ে গেছি।
-কী বলব? অবিশ্বাস্য। মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলাম।